জঙ্গিবাদ থেকে ফিরলেন সিলেটের ইঞ্জিনিয়ার স্বামী ও ডাক্তার স্ত্রী
অনলাইন ডেস্ক

নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে জঙ্গিবাদের রাস্তা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসলেন ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার এক দম্পতি। র্যাবের ডিরেডিকেলাইজেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নব জীবন শুরু করতে যাচ্ছেন তারা।
রাজধানীতে র্যাব সদরদপ্তরে ‘নব দিগন্তের পথে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার আত্মসমর্পণ করেন চিকিৎসক নুসরাত আলী জুহি ও তার স্বামী ইঞ্জিনিয়ার শাওন মুনতাহা ইবনে শওকত। হিযবুত তাহরীর সদস্য ছিলেন তারা।
এদের সঙ্গে আত্মসমর্পণ করেন আরও সাত জঙ্গি। ফুল দিয়ে নতুন জীবনে তাদের স্বাগত জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
অনুষ্ঠানে শাওন বলেন, ‘আমি যে পথে হেঁটেছি, তা ভুল পথ। তরবারির ঝনঝনানি, এটা সেই যুগের কথা। এখন জ্ঞান বিজ্ঞানের যুগ, শিক্ষার যুগ, মননশীলতা, চিন্তা, সৃষ্টিশীলতার যুগ। ভালোবাসা দিয়ে পৃথিবী গড়ে তোলার যুগ।
‘আমরা কেউ যেন ইসলাম নিয়ে ভুল ব্যাখ্যায় প্রভাবিত না হই। ইসলাম শান্তির ধর্ম। আসুন আমরা ইসলাম অনুসরণ করি, একটা সত্য সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’
জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার স্মৃতি তুলে ধরে শাওন জানান, ছাত্র থাকাকালে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় বিভিন্ন পোস্ট দেখে আকৃষ্ট হন। ২০০৯ সালে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের দাওয়াতি শাখায় কাজ শুরু করেন। ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এ কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকেন।
তিনি বলেন, ‘তবে এখন পর্যন্ত আমি নিজে কখনও কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হইনি। এক পর্যায়ে আমি দায়িত্বশীলের নির্দেশনায় দাওয়াতি শাখা থেকে বিচ্ছিন্ন হই এবং জঙ্গি সংগঠনের প্রশিক্ষণের ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে নিয়োজিত হই।’
জঙ্গিবাদে জড়ানোয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার কারণে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছিলেন না বলে জানালেন শাওন।
জঙ্গি জীবনের বর্ণনা তুলে ধরে শাওন বলেন, ‘আমি যখন হিযরতে ছিলাম, তখন আমার এবং পরিবারে অনেক দুর্ভোগ নেমে আসে। তখন পুরো সমাজ থেকেই আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই।
‘আমার স্ত্রী একজন চিকিৎসক। কিন্তু জঙ্গিবাদে জড়ানোর কারণে জীবনেও চরম গ্লানি নেমে আসে। আমার সন্তানের জীবনেও অন্ধকারের কালো ছায়া নেমে আসে। এক কথায় আমার নিজের কোনো সামাজিক, পারিবারিক, ব্যক্তিগত জীবন বলে কিছু ছিল না। অনেক সময় দেখা যেত, নিরাপত্তাহীনতার কারণে মসজিদে গিয়ে ঠিকমত নামাজ পড়তে পারতাম না। ঘরেই পড়তে হতো।’
শাওন বলেন, ‘এসবের পর একটা সময় গিয়ে আমি আমার ভুল বুঝতে পারি। বুঝতে পারি, আমি ধর্মীয় অপব্যাখ্যার শিকার হয়েছিলাম। তখন নিজেই অনুশোচনার বেড়াজালে আটকা পড়ে যাই।
‘আমার ভেতরে নতুন বোধোদয় হয়। তখন আমি আমার পরিবারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। পরিবার বন্ধুদের নিয়ে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখি। এরপরও আমি ভীতু হয়ে পড়ি। তারপর পরিবারের মাধ্যমে র্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করি।’
স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সহায়তা করায় র্যাবকে ধন্যবাদ জানান শাওন। এ উদ্যোগের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সরকারের প্রতিও।
‘আজ এক নতুন শাওনের জন্ম হলো। বাংলাদেশ সরকারের জঙ্গি পুনর্বাসন প্রকল্পের মাধ্যমে আমি নিজেকে আবার ফিরে পাচ্ছি। আমাদেরকে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেয়া ও আমার কাছে আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।’
র্যাব জানায়, সিলেটের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে হিযবুত তাহরীরে যুক্ত হন শাওন। পরবর্তীতে তিনি হিযবুত তাহরীরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় শীর্ষ পর্যায়ে চলে যান। ২০০৯ সালে আনসার আল ইসলামে যোগ দেন। ২০১১ সালে বিয়ে করেন মেডিক্যাল শিক্ষার্থী নুসরাতকে।
স্বামী শাওনের অনুপ্রেরণায় স্ত্রী নুসরাতও জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন। পরবর্তীতে সংগঠনের নির্দেশনায় তিনি ঢাকায় চলে আসেন। ২০১৭ সাল থেকে তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার আতঙ্কে তারা ঢাকাতে বিভিন্ন জায়গায় বাসা বদল করেন। এক পর্যায়ে ঢাকার আশেপাশের এলাকায় বসবাস শুরু করেন।
স্বামীর সঙ্গে নুসরাতও সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতেন। জঙ্গিবাদে জড়িত হওয়ার কারণে ঢাকায় কয়েকটি হাসপাতালে তার পরিচয় গোপন খণ্ডকালীন চাকরি করতে হয় তাকে।
র্যাব বলছে, জঙ্গিবাদে জড়িয়ে ফেরারি জীবনযাপন করতে হচ্ছিল এই দম্পতিকে। তাদের দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সৃষ্টি হয় দূরত্ব। তাদের পারিবারিক জীবনে অশান্তি সূত্রপাত হয়। এক পর্যায়ে তারা তাদের ভুল বুঝতে পারে। ফলে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়।
সরকার ও সমাজের সবাই সোচ্চার হওয়ায় বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ দমন করতে পেরেছে বলে মনে করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘একের পর এক যখন জঙ্গিরা উত্থাপন ঘটাচ্ছিল তখন আমরা সবাই চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। তখন প্রধানমন্ত্রী সারাদেশের মানুষকে, কৃষক, শ্রমিক-শিক্ষকসহ দলমত ধর্ম নির্বিশেষ মেহনতি জনতাকে ডাক দিয়েছিলেন ঘুরে দাঁড়াবার জন্য। সবাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে, মানববন্ধন হয়েছে, সমাবেশ হয়েছে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। স্কুলের ছাত্রটিও ঝুলিয়েছিল, আমরা জঙ্গিবাদকে সমর্থন করি না।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সরকার শুধু জঙ্গিবাদ কঠোর হস্তে দমনই করছে না। পাশাপাশি ডি-রেডিকালাইজশনের মাধ্যমে তাদের ভুল পথ থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনারও চেষ্টা চলছে।
আত্মমর্পণ করা জঙ্গিদের ফুল দিয়ে শুভ কামনা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ছবি: নিউজবাংলা
জঙ্গিরা কখনও বিজয়ী হবে না
বাংলাদেশে জঙ্গিদের কখনও বিজয়ী হতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ।
জঙ্গিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ককটেল, জর্দার কৌটা বা এ জাতীয় জিনিসপত্র দিয়ে তোমরা কারও বিরুদ্ধেই বিজয়ী হতে পারবে না। বরং ওই পথে গিয়ে তোমরা পরিবার-সমাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছ। বেঘোরে প্রাণ যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এই অন্ধকার জগতে গিয়ে তোমার নিজেকে, পরিবারকে এবং রাষ্ট্রকে বিপদে ফেলতে পার।’
আত্মসমর্পণ করে জঙ্গিদের ‘নব দিগন্তের পথে’ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে আইজিপি বলেন, ‘যারা এখনও ওই পথে আছ, তোমরা ফিরে এসো। কারণ তোমরা কখনও বিজয়ী হবে না।’
- লকডাউন ভেঙ্গে ঢাকা থেকে ট্রেন পৌছাল সিলেটে, তোলপাড়
- আক্রান্তের ৪র্থ স্থানে সিলেট: ঈদের মার্কেটিংয়ের খেসারত
- সিলেটে করোনা আক্রান্ত সেই ডাক্তার ঢাকায় লাইফ সাপোর্টে
- আমাদের আবু তৈয়ব স্যার
- সুনামগঞ্জে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে
- সিলেটে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী ডাক্তার, বাসা লকডাউন
- ফ্লাটের দরজা ভেঙ্গে ওসমানী হাসপাতালের চিকিৎসকের লাশ উদ্ধার
- ছাতকের কালাম চৌধুরীকে মারার জন্য মানিক বোমা বানিয়েছিলেন:মুকুট
- সিলেটে লন্ডনী কন্যা সেজে প্রতারণার ভয়ঙ্কর ফাঁদ শিউলির
- কলেজ শিক্ষক সাইফুরকে হোটেলে নিয়ে হত্যা করেন প্রেমিকা রুপা
- শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলায় দিরাই`র ভাটিপাড়ার শিশু জায়ান নিহত
- সিলেটে নির্মাণাধীন চায়নিজ রেস্টুরেন্টে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড
- বিমান ছিনতাই: নিহত যুবকের সাথে নায়িকার ছবি ভাইরাল
- জিন্দাবাজারের আহমদ ম্যানশনে ক্রেতাকে আটকে রেখে মারধরের অভিযোগ
- দেশীয় রাজনীতির কবলে বৃটেনের শহীদ মিনার