আত্বগোপনে থাকা হারিছ চৌধুরীর রহস্যে ঘেরা মৃত্যু নিয়ে ধূম্রজাল
বিশেষ সংবাদদাতা

১/১১ পর থেকে নিরুদ্দেশ এক সময়ের আলোচিত সমালোচিত প্রভাবশালী রাজনিতিবিদ সিলেটের হারিছ চৌধুরীর মুত্যু সংবাদ নিয়ে হঠাৎ করেই দেশ বিদেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রায় ১৪ বছর আগে লাপাত্তা হারিছ চৌধুরী। বলা হচ্ছিল তিনি বিদেশে চলে গেছেন। এরপর থেকেই তার অবস্থান নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়।বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সংবাদ বের হয় তাঁর অবস্হান নিয়ে কিন্তু এক যুগেরও বেশী সময় পার হওয়ার পরও নিশ্চিত হওয়া যায়নি আসলে তিনি কোথায় আছেন। তিনিও নিজের অবস্হান জানান দেননি। ১/১১ এর পর পলাতক ও আত্বগোপনে থাকা বিএনপির সব নেতা আদালতে হাজির হয়ে প্রকাশ্যে এলেও হারিছ চৌধুরীর অবস্হান ছিল রহস্যে ঘেরা। দেশে-বিদেশে কোথাও কেউ তার অবস্হান নিশ্চিত করতে পারেননি।
গত দু’দিন থেকে খবর বেরুচ্ছে তিনি মারা গেছেন। তাও অন্তত ৩ মাস আগে। মৃত্যুর তিন মাস পর এই খবর চাউর হয়েছে। এই মৃত্যুর খবর নিয়েও ধূম্রজাল। কোথায় মৃত্যু হয়েছে তাঁর?
গত মঙ্গলবার চাচাতো ভাই কানাইঘাটের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী তার ফেসবুকে হারিছ চৌধুরী ও তার ছবি দিয়ে স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন- ‘ভাই বড় ধন রক্তের বাঁধনে...।’ আর এই স্ট্যাটাসের কমেন্টসে অনেকেই হারিছ চৌধুরীর রুহের মাগফিরাত কামনা করেছেন। তার ওই ফেসবুক স্ট্যাটাস দেয়ার পরই হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়টি আলোচনায় আসে।
মৃত্যুর পর কবরই বা কোথায় দেয়া হয়েছে-এই তথ্য কেউ দিতে পারছেন না। ঘনিষ্ঠজন ও প্রতিবেশীদের অনেকে তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করছেন। কিন্তু দাফন কোথায় হয়েছে তা বলতে পারছেন না।
১৪ বছরের রহস্য জীবনের মতোই মৃত্যুটাও রহস্যে ঘেরা আলোচিত রাজনীতিবিদ হারিছ চৌধুরীর। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার এক সময়ের রাজনৈতিক সচিব। সেই সময়ের ক্ষমতাধর এই নেতা এক এগারোর পটপরিবর্তনের পর গাঢাকা দেন। এর থেকে কোথায় ছিলেন এই প্রশ্নের উত্তর কেউ খোলাসা করতে পারেনি। বলা হচ্ছে দেশ ছেড়ে তিনি ভারতে পালিয়েছিলেন। পরে তিনি পাকিস্তান ও ইরান ভ্রমণ করেছেন। সেখান থেকে লন্ডন যেতে পারেন। লন্ডনে গত আগস্টে তিনি করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশ হয়।
সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তার মৃত্যু হয়েছে এমন তথ্য জানিয়েছেন দেশে অবস্থানরত তার ঘনিষ্ঠরা। তাদের কেউ বলছেন, তিনি লন্ডনে মারা গেছেন এবং লন্ডনেই দাফন করা হয়েছে। আবার কেউ বলছেন, তিনি কোনো এক মাধ্যমে দেশে ফিরে এসেছিলেন। ঢাকায় অবস্থানকালেই তার মৃত্যু হয়। ঢাকার কোনো একটি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। মৃত্যুর বিষয়টি সূত্রগুলো নিশ্চিত করলেও কোথায় দাফন করা হয়েছে এটি কেউ বলতে পারছেন না। এতে অনেকে প্রশ্ন করছেন তার এই মৃত্যুর খবরটি আসলে সত্য কিনা?
বিএনপি’র এক সময়ের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন হারিছ চৌধুরী। দলের যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামি। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসন আমলের শুরুতে দেশ থেকে পালিয়ে যান বলে তখন প্রচার হয়। এরপর থেকে তিনি পলাতকই ছিলেন। তিনি কোথায় অবস্থান করছেন সে সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ হয়নি।
হারিছ চৌধুরীর বাড়ি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার পূর্ব দিঘীরপাড় গ্রামের দর্পণ নগর গ্রামে। পারিবারিকভাবে অনেকেই বলেছেন- পলাতক হওয়ার পর হারিছ চৌধুরী দীর্ঘ সময় ভারতের আসামের করিমগঞ্জে নানাবাড়ীতে অবস্থান করেছেন। মাঝেমধ্যে তিনি লন্ডনে তার স্ত্রী সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতেও গেছেন। তবে কখনো গোপনে দেশে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি কেউ। দেশে থাকা স্বজনরাও হারিছ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখার বিষয়টি সব সময় এড়িয়ে গেছেন। এ কারণে বাংলাদেশ থেকে আড়ালে থাকা বিএনপি’র এক সময়ের প্রভাবশালী নেতা হারিছ চৌধুরীকে নিয়ে সব সময়ই রহস্য ছিল।
প্রায় তিন মাস আগে পারিবারিকভাবে এলাকায় হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবরটি চাউর হলেও তখন মারা যাওয়ার বিষয়টি স্বজনদের কেউ নিশ্চিত করেননি। বরং বিষয়টি এড়িয়ে যান তারা। বুধবার গণমাধ্যমের কাছে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেন তারই চাচাতো ভাই ও সিলেট জেলা বিএনপি নেতা আশিক উদ্দিন চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন, ‘প্রায় ৩ মাস আগে লন্ডনের একটি হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি ছিলেন হারিছ চৌধুরী। ভর্তি থাকা অবস্থায়ই তিনি মারা যান। তার মরদেহ লন্ডনে দাফন করা হয়েছে।
হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর সময় তিনি (আশিক চৌধুরী) যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন। তখন তিনি খবরটি শুনেছেন।’ বিলম্বে কেন মৃত্যুর খবর প্রকাশ করা হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে আশিক চৌধুরী জানান, ‘আমরা জানি তিনি মারা গেছেন। তখন তো কেউ আর আমাদের জিজ্ঞেস করেনি। এখন জিজ্ঞেস করায় বলছি।’
এদিকে, হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার ছোট ভাইয়েরও মৃত্যু হয়েছে। তাকে নিজ বাড়ি কানাইঘাটে দর্পণ নগরে জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে। ওই জানাজায় অংশ নেয়া কানাইঘাটের কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিক জানিয়েছেন, জানাজার পর সবাই বলাবলি করছিল ভাইয়ের শোকে মারা গেছেন ভাই। আর 'ওই ভাই' বলতে হারিছ চৌধুরীকেই তখন বোঝানো হয়েছিল।
হারিছ চৌধুরীর আত্মীয়, একই এলাকার বাসিন্দা ও সিলেট জেলা বিএনপি’র সিনিয়র নেতা আবুল কাহের চৌধুরী বুধবার গণমাধ্যমের কাছে জানিয়েছেন, হারিছ চৌধুরী ঢাকায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় মারা গেছেন। গোপনে ঢাকায় তার মরদেহ দাফন করা হয়েছে। তখন তার মেয়েও ঢাকায় অবস্থান করছিল। সেটি তিনি পারিবারিকভাবে শুনেছেন বলে দাবি করেছেন।
পারিবারিক অপর একটি সূত্র বলছে-বিদেশি তাবলীগ জামাতের সঙ্গী হয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন হারিছ চৌধুরী। সিলেটের বাইরে কোনো এক জেলায় বিদেশি তাবলীগ জামাতের সঙ্গে থাকা অবস্থায় হারিছ চৌধুরী মারা যান। মারা যাওয়ার পর ওই এলাকায়ই তাকে দাফন করা হয়েছে। তবে ঠিক কোন এলাকায় হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু ও দাফন হয়েছে সেটি কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি।
সিলেট জেলা বিএনপি’র কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়টি তারা শুনেছেন। তবে এ ব্যাপারে সুনির্র্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই তাদের কাছে।এক সময় সিলেটেও প্রভাবশালী ছিলেন হারিছ চৌধুরী।
- লকডাউন ভেঙ্গে ঢাকা থেকে ট্রেন পৌছাল সিলেটে, তোলপাড়
- আক্রান্তের ৪র্থ স্থানে সিলেট: ঈদের মার্কেটিংয়ের খেসারত
- সিলেটে করোনা আক্রান্ত সেই ডাক্তার ঢাকায় লাইফ সাপোর্টে
- আমাদের আবু তৈয়ব স্যার
- সুনামগঞ্জে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে
- সিলেটে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী ডাক্তার, বাসা লকডাউন
- ছাতকের কালাম চৌধুরীকে মারার জন্য মানিক বোমা বানিয়েছিলেন:মুকুট
- সিলেটে লন্ডনী কন্যা সেজে প্রতারণার ভয়ঙ্কর ফাঁদ শিউলির
- ফ্লাটের দরজা ভেঙ্গে ওসমানী হাসপাতালের চিকিৎসকের লাশ উদ্ধার
- কলেজ শিক্ষক সাইফুরকে হোটেলে নিয়ে হত্যা করেন প্রেমিকা রুপা
- শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলায় দিরাই`র ভাটিপাড়ার শিশু জায়ান নিহত
- সিলেটে নির্মাণাধীন চায়নিজ রেস্টুরেন্টে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড
- বিমান ছিনতাই: নিহত যুবকের সাথে নায়িকার ছবি ভাইরাল
- জিন্দাবাজারের আহমদ ম্যানশনে ক্রেতাকে আটকে রেখে মারধরের অভিযোগ
- দেশীয় রাজনীতির কবলে বৃটেনের শহীদ মিনার